জাল সনদে ৩৪ বছর আইন পেশা, ছিলেন পিপি পদেও!

জাল সনদ ব্যবহার করে ৩৪ বছর ধরে আইন পেশা চালিয়ে যাওয়ার অভিযোগ উঠেছে হবিগঞ্জের একজন আইনজীবীর বিরুদ্ধে। তিনি জাল সনদেই ৭ বছর দখল করে ছিলেন জেলার সর্বোচ্চ আইন কর্মকর্তার (পাবলিক প্রসিকিউটর) পদ। বুধবার হঠাৎ তাকে এ পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে।

অতিরিক্ত দায়িত্ব পেয়েছেন জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি (অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর) সালেহ উদ্দিন আহমেদ।

এ বিষয়ে জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি আবুল মনসুর চৌধুরী জানান, জাল সার্টিফিকেটের যে বিষয়টি সম্প্রতি সামনে এসেছে এটি আসলে আমাদের সরাসরি কিছু করার সুযোগ নেই। আর তার সার্টিফিকেট জাল কিনা সেটিও নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না।

তিনি বলেন, আমরা সার্টিফিকেট যাচাই করি না। এটি যাচাই করে বার কাউন্সিল। সেখান থেকে নিবন্ধিত হওয়ার পর আমাদের এখানে চিঠি দেয় সে অনুযায়ী আমরা সমিতিতে অন্তর্ভুক্ত করি। এ বিষয়ে বার কাউন্সিল যদি কিছু না করে তবে আমরা সরাসরি কিছু করতে পারি না।

অভিযুক্ত সিরাজুল হক চৌধুরী বলেন, আমি অসুস্থ। কথা বলতে পারছি না। তবে আমার বিরুদ্ধে যে সার্টিফিকেট জালিয়াতির অভিযোগ উঠেছে এটি সত্য নয়। আমার বিরুদ্ধে হবিগঞ্জে একটি এবং ঢাকায় একটি গ্রুপ কাজ করছে। সরকার যখন যাকে খুশি এ পদে নিয়োগ দিতে পারে, আবার যাকে খুশি বাদ দিতে পারে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সিনিয়র একজন আইনজীবী ও আইনজীবী সমিতির সাবেক নেতা বলেন, আমরা জানতে পেরেছি আইন মন্ত্রণালয়ের সলিসিটর উইং সিরাজুল হকের সার্টিফিকেট জালিয়াতির বিষয়টি তদন্ত করছেন। তবে এখন কী পর্যায়ে আছে তা আমরা নিশ্চিত হতে পারিনি।

আইন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব (জিপি/পিপি) মো. আব্দুছ ছালাম মণ্ডল স্বাক্ষরিত এক পত্রে বুধবার সিরাজুল হকের পিপি পদের নিয়োগ বাতিল করা হয়। এতে উল্লেখ করা হয় জনস্বার্থে তার নিয়োগ বাতিল করা হয়েছে। পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত এ পদে দায়িত্ব পালন করবেন অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর সালেহ উদ্দিন আহমেদ। তাকে অনতিবিলম্বে মামলার নথিপত্রসহ যাবতীয় দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়ার জন্য সিরাজুল হককে নির্দেশ দেওয়া হয়।

হবিগঞ্জ আদালতের কয়েকজন আইনজীবী জানান, জেলার পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) মো. সিরাজুল হক সম্পূর্ণ জাল ও ভুয়া সার্টিফিকেটে গত ৩৪ বছর ধরে জেলা জজ কোর্টে আইন পেশা চালিয়ে যাচ্ছেন। ভুয়া সার্টিফিকেটধারী আইনজীবী হয়েও ২০১৬ সালে তিনি পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) হিসেবে নিয়োগ পান। তখন থেকেই গুরুত্বপূর্ণ সরকারি দায়িত্ব পালন করে আসছেন। বাগিয়ে নিয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতির পদও। রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে অনৈতিকভাবে তিনি এসব পদ-পদবি দখল করেন।

অনুসন্ধানে জানা যায়, সিরাজুল হকের দেওয়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিএ পাশ সার্টিফিকেটে পাশের সন হিসেবে লেখা আছে ১৯৮০। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন এ সার্টিফিকেটটিতে ভাইস চ্যান্সেলর হিসেবে প্রফেসর এমাজউদ্দিন আহমেদের স্বাক্ষর রয়েছে। অথচ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রফেসর এমাজউদ্দিন আহমেদ ভাইস চ্যান্সেলর হন ১৯৯২ সালে। ১৯৮০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর ছিলেন ড. ফজলুল হালিম চৌধুরী।

এছাড়া সার্টিফিকেটটির উপরের বাম পাশে রোল নাম্বার ডানপাশে সিরিয়াল নাম্বার রয়েছে; যা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সনদপত্রে ব্যবহার করা হয় না।

সিরাজুল হক ১৯৮৫ সালে ঢাকা ‘ল’ কলেজ থেকে এলএলবি পাশ করেছেন বলে সার্টিফিকেট দেন কিন্তু ঢাকা ‘ল’ কলেজে যোগাযোগ করে জানা যায় এ সার্টিফিকেটটিও জাল।